৩০ নভেম্বর মারা গেছেন জাতীয় অধ্যাপক ও বাংলা একাডেমির
সভাপতি রফিকুল ইসলাম। তাঁর স্মরণে ‘আমার ভাষা’ বইটি নিয়ে লিখেছেন বই আলোচক ও ময়ূরপঙ্খি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নিহা হাসান ।
আমার ভাষার নাম বাংলাভাষা। পৃথিবীর প্রায় তিরিশ কোটি মানুষের ভাষা-ই বাংলা; যার বয়স হাজার বছরের বেশি। আমতা আমতা করে আদর্শ লিপিতে যে বাংলা বর্ণমালাগুলো প্রতিদিন একটু আধটু করে শিখিয়েছেন আমাদের মা; তার বয়স পাঁচশো বছরের উপরে। শুধু কি বর্ণমালা! হাজার বছর ধরে বাংলা ভাষায় অনেক প্রবাদ-প্রবচন, ছড়া, কবিতা, কেচ্ছা-কাহিনী মুখেমুখে আবার কাগজে-কলমে রচিত হয়েছে। এভাষাতে লিখে কত কবি লেখক সাহিত্যের জন্য বড় বড় নোবেল পুরস্কারও পেয়েছেন।
‘আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা….’ ‘ঘুমপাড়ানি মাসি-পিসি মোদের বাড়ি এসো…’ কত মধুর ভাষা বাংলা ভাষায় গাওয়া এসব গান। আর এই গান গেয়ে এখনও আমাদের বাঙালি মা, ফুফু, খালা, চাচি, মামি, দাদি, নানিরা আমাদের ঘুম পাড়ান।
ঘুমপাড়ানি গান, মজার ছড়া, সুখ-দুখের গান হতে শুরু করে যত আনন্দ-ভালোবাসা সবই সুন্দর ও মধুর রূপে বাংলা ভাষাতেই প্রকাশ পেয়েছে বারবার।১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি এই বাংলা ভাষার মান রাখতে প্রাণ দিয়েছিলেন আমাদের অনেক ভাই। তাঁদের স্মরণে এখনও আমরা গেয়ে চলেছি, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি…আমি কি ভুলিতে পারি?’
আমরা জানি, এই বাংলাভাষা আমাদের জন্য কি! কতটা গৌরবের ভাষা এই বাংলা ভাষা। কিন্তু আমাদের শিশুদের কি এখন থেকেই বোঝানো উচিত না, কেন এ ভাষা রাষ্ট্রভাষা? কেন এ ভাষাকে মায়ের ভাষা বলা হয়? এ ভাষায় আমরা শুধু কি লিখি, শুধুই কি পড়ি? শুধুই গান গাই? আমরা কি প্রাণ দিয়ে শ্রদ্ধা করিনি এ ভাষাকে? আর কাদের স্মরণেই বা শহীদ মিনারে প্রতিবছর যাই?
এসব প্রশ্নের সহজ উত্তরপত্র ‘আমার ভাষা’। বাংলার মনোরম চিত্রের উপর লেখক ছোটদের জন্য ছোট পরিসরে সহজভাষায়, অল্প কথায়, ছোটছোট ছড়া-কবিতা ওগানে বুঝিয়েছেন বাংলা ভাষার তাৎপর্য। বাংলা রযে সৌন্দর্য এবং বাংলার যেভাষা দুটোই এত নিখুঁতকরে আটানো হয়েছে প্রতিপৃষ্ঠায়। যা সত্যিই অসাধারণ! এ বইটি শিশুদেরজন্য অবশ্য-পাঠ্য!
‘আমার ভাষা’ র লেখক জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলনও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। যিনি শিশু-কিশোর ও প্রাপ্তবয়স্কদেরজন্য লিখেছেন বাংলা ভাষার তাৎপর্য নিয়ে নানান গ্রন্থ।
গভীর শোক নিয়ে বলতে হচ্ছে যে, স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম আমাদের মাঝে আর নেই। তিনি গতকাল ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না লিল্লাহি রাজিউন)।
তাঁর স্মরণে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা!
Σχόλια