আমি জোয়া , একটা জলজ্যান্তপ্যান্ডোরার বাক্স; সবকিছুতেই আশা খুঁজে বেড়াই আর সবকিছুতেই সুন্দর খুঁজে বেড়াই ।আমার বই পড়তে ভালো লাগে, গান গাইতে ভালো লাগে আর ঘুরতে ভালো লাগে।ছবি তুলতেও ভালো লাগে তবে বেশিরভাগ সময় সেই সব ছবির বিষয় হয় বই । আমার খুব ইচ্ছে আমার একটা মস্ত লাইব্রেরি হবে ।
তাইতো রাজ্যের বই কিনে ফিরি ।
ময়ূরপঙ্খির নতুন প্রকাশিত দুইটি চমৎকার ছবির বই নিয়ে আলোচনা করব ।
খোকা সব পারে
গল্প : মঞ্জু সরকার ছবি : শ্রেয়া সেন
ছোট থাকতে আমাদের সবার-ই বড় হওয়ার খুব সখ থাকে। বড়রা যা করে আমাদেরও তাই করতে ইচ্ছে হয়। এই ইচ্ছেগুলো নিয়েই খোকা সব পারে। আমি সব সময় একটা কথা বলি। সেটা হচ্ছে, ছোট শিশুরা একতাল মাটির মত। আপনি তাকে যেভাবে রূপ দেবেন, সে বড় হয়ে সেই রূপ-ই পাবে। খোকা সব পারে বইটাতে এই জিনিসটা দেখে খুব ভালো লেগেছে। খোকাকে তার বাবা আর মা স্বপ্ন দেখতে যেমন উৎসাহ দেয়, তেমনি তাকে বাস্তবতাও শেখায়। খোকার মা তাকে রুটি বানাতে দেয়, একবার-ও বলে না এটা মেয়েদের কাজ। এমন নতুন প্রজন্ম-ই তো আমাদের প্রয়োজন।
এই বইয়ের খুব ভালো একটা দিক হচ্ছে এই বইয়ে কোন যুক্তাক্ষর নেই। যে কারণে যেই শিশুরা নতুন পড়তে শিখছে, তারা সহজেই পড়তে পারবে। আর খুব রঙ্গিন একটা বই। তাই ছোট শিশুরা খুব আগ্রহ নিয়েই বইটা খুলবে।
পড়া ছাড়া আর সব কিছুতেই খোকার ভীষণ আগ্রহ। সমুদ্র দেখতে গিয়ে ওর সাগরপাড়ি দেওয়ার ইচ্ছা জাগে। বাবানা জানলেও খোকা কিন্তু ঠিকই জানে কিভাবে সাতসমুদ্র পার হতে হয়।
৪-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী।
৮"×১০.৮" ছবির বই, ২৪ পৃষ্ঠা
বুক ট্রেলার
দাদুর হাতে জাদুর লাঠি
গল্প : মঞ্জু সরকার ছবি : ইসরাত জাহান শাইরা
আমরা যারা নিজেদের নাইনটিজ কিড বলি, আমরা কিন্ত অনেকেই দাদা-দিদার কাছে বড় হয়েছি। আমাদের ছেলেবেলার এবং বড়বেলার একটা বিশাল অংশ জুড়ে ছিল আমাদের দাদা-দিদা’রা। এই বইটা একদম সেই ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়।
দীপুর বাবা-মা দুজনেই চাকরি করেন বলে, দীপু সারাদিন দাদুর সাথেই থাকে। দাদুর সাথে খেলে। দাদুর সাথে স্কুলে যায়। আর দাদু বলে দীপু নাকি টার জাদুর লাঠি। কারণ দীপুকে ছাড়া দাদু চলতেই পারেন না।
ভীষণ রঙ্গিন আর সুন্দর ছবিওয়ালা এই বইটি শিশুদের দারুণ ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস। আর এই বইটিতেও কোন যুক্তাক্ষর নেই। যার কারণে যেইসব ছানাপোনা মাত্র পড়তে শিখছে, তাদের পড়তে একদম-ই অসুবিধা হবে না।
আমাদের বাসার ছানাপোনাদের জন্যে বেশ কয়েক বছর ধরেই আমি ময়ূরপঙ্খীর বই নিয়ে আসি। তাই এবার আমাকে যখন ওরা বলল বই পাঠাচ্ছে, বেশ খুশি হয়েই হ্যাঁ বলে দিয়েছিলাম। সবাই কী ভীষণ পছন্দ করল।
শিশুদের যে খুব ছোট থেকেই পড়বার অভ্যাস করা উচিত সে ব্যাপারে আশা করি কেউ আমার সাথে দ্বিমত করবেন না। আর আমার কাছে সব সময়ই মনে হয়, রেপাঞ্জেল কিংবা সিন্ডেরেলার গল্পের চাইতে আমাদের আশেপাশের এই গল্পগুলো পড়াটা বেশি উপযোগী।
দীপুর মা-বাবা দুজনই অফিসে যায়। ওর দাদুর এখন আর অফিস নেই। তার সাথে মজার সব খেলা খেলতে খেলতে একদিন কিভাবে যেন দাদুর হাতের জাদুর লাঠি হয়ে যায় দাপু।
৪-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী।
৮"×১০.৮" ছবির বই, ২৪ পৃষ্ঠা
বুক ট্রেলার
পরিচিতি
মঞ্জু সরকার, লেখক
কথাশিল্পী মঞ্জু সরকার ছোটগল্প, উপন্যাস ও শিশুসাহিত্য রচনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। এছাড়া ফিলিপস, আলাওল ও অগ্রণী ব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ আরো অনেক সম্মাননাও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তিনি ২০০৬ সালে আইওয়ার ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছেন। ‘তমস’, ‘মৃত্যুবাণ’ প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত বই। তাঁর রচিত শিশুসাহিত্যের মধ্যে অন্যতম ‘ছোট্ট এক বীরপুরুষ’, ‘রাজাকার পালায়’, ‘ভূত দেখা’, ‘অপুর দাদুগাছ’ প্রভৃতি।
শ্রেয়া সেন
চিত্রশিল্পী, খোকা সব পারে
খুব ছোটবেলায় রুশদেশের ছবির বইগুলো গোগ্রাসে গিলতে গিলতে আর দেওয়ালে ছবি আঁকতে আঁকতে শ্রেয়া সেনের যা হওয়ার ঠিক তাই হলো। আরেকটু বড় হলে পড়তে গেলেন অ্যানিমেশন ফিল্ম ডিজাইন। শিশুতোষ প্রকাশনীতে গ্রীষ্মকালীন ইনটার্নশিপ করতে গিয়ে বুঝলেন এই কাজটাই তিনি সারাজীবন করতে চান। কোনো কথাবার্তা বা লেখাকে বিশ্লেষণ করা, কমিক্স, হাস্যরস, মানুষকে নকল করা, চা বানানো আর পান করা এসব শ্রেয়ার আগ্রহের বিষয়। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় বসে আঁকাআঁকি তাঁর খুব পছন্দ। ‘Neelu's Big Box’ এবং ‘Akkad Bakkad’ তাঁর অলংকৃত অন্যতম বই।
ইশরাত জাহান শাইরা
চিত্রশিল্পী, দাদুর হাতে জাদুর লাঠি
ইশরাত জাহান শাইরার জন্ম ঢাকায়, ১৯৯৬ সালে। ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি থেকে গ্রাফিক ডিজাইন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় ভিজুয়ালাইজার হিসেবে কর্মরত। ফ্রিল্যান্স গ্রাফিক ডিজাইনার ও চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি বিভিন্ন সংস্থা ও শিল্পীর সাথেও কাজ করছেন। ‘পুপু এবং আর ড্রয়িং খাতার ভূতেরা’, ‘নীল কুমিরের বাচ্চা’, ‘ভূত দেখা’, ‘দাদুর হাতে জাদুর লাঠি’ প্রভৃতি তাঁর অলংকৃত উল্লেখযোগ্য বই।