top of page

কথাসাহিত্যিক মঞ্জু সরকারের সোনামণিদের মজার গল্প গ্রন্থমালা

Updated: Jun 17, 2021



সদ্য পড়তে শেখা শিশুদের উপযোগী করে লেখা ছোট্ট পাঁচটি গল্প নিয়ে বইগুলি। শিল্পীদের রঙিন তুলির আঁকাজোকায় গল্পগুলি সুন্দর ফুটেছে।


★৫-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী।

★ গল্পের বই, ১৬,২৪ পৃষ্ঠা


বই-আলোচক ও ময়ূরপঙ্খির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নিহা হাসান বইগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।

 

ভূত দেখা

ছবি : ইশরাত জাহান শাইরা


ভূতকে একজন মৃত ব্যক্তির আত্মাবলা হয়, যা জীবিত মানুষের কাছে দেখা দেয়। যদিও ভূত কখনোই আসল প্রমাণিত হয়নি। তবে মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই ভূতে বিশ্বাসকরে। ভূতের গল্পগুলো আজও জনপ্রিয়, বিশেষত শিশুদের মধ্যে। স্লিপওভার এবং ক্যাম্পআউটের সময় শিশুরা বেশ উপভোগ করে এ ধরনের গল্প।

শিশুদের জন্য ময়ূরপঙ্খির ভূতের এক গল্প ‘ভূত দেখা’। এগল্পে নিপা কলিংবেলের ডিংডাং শব্দ ও ফোনের চিনচিন রিংটোনের শব্দ শুনলেই ভাবত ভূত এসেছে কিংবা ভূত কল করছে। ভূত এসেছে বলে দরজা খুলতে দেবে না বাবাকে। ভূত কল করেছে বলে ফোন ধরতে দেবে না মাকে। এমনটাই চলছিল। একদিন বিজু মামা নিপার এ ভয় কাটাতে ভূতটাকে খাঁচায় বন্দি করে ফেলে। নিপা দেখে খাঁচাটা একদম ফাঁকা। তবে কি ভূত বলতে কিছুনেই, না-কি ভয় না-পেলে ভূতকে আর দেখা যায় না? গল্পটি বিশেষত সেসব শিশুর জন্য উপযোগী যারা ভূতের ভয়ে সারাক্ষণ ভীত হয়ে থাকে। ভূতের বইগুলো আমাদের কীসের ভয়হয় তা পরীক্ষা করার এবং এটি সম্পর্কে কথা বলার সুযোগ দেয়। ‘ভূত দেখা’ এমনই একটি গল্প যা নেতিবাচক অনুভূতিগুলো শিশুদের গভীরে সমাধিস্থ না-করে বরং আলোজ্বালায়।

 

পিঁপড়া ও ডায়নোসরের গল্প

ছবি : অদ্রিজা ঘোষ


এই গল্পটি লুনা নামের ছোট্ট একটি মেয়ের; যে দাদার কথামতো চকলেটগুলো মুন, সুমি ও পলাকে ভাগ করে দেয়নি; বরং লুকিয়ে খেয়ে নিচ্ছিল। এ অবস্থায় লুনার মুখের চকলেটের কিছু টুকরো মেঝেতে পড়ে গেল। সেই চকলেট খেতে দুটো লাল পিঁপড়া চলে এলো। পিঁপড়া দুটো চকলেটের টুকরোগুলো নিতে পারছিল না। তাই একটি আরেকটির কানে কানে সবাইকে খবর দিতে বলল। যাতে তারা সবাই মিলে চকলেটগুলো বাড়িতে নিয়ে মজা করে খেতে পারে। সেই খবর পেতেই পিঁপড়ার দল সারি বেঁধে ছুটে এলো। এই কাণ্ড দেখে লুনা তার দাদুকে ডাক দিল। দাদু দেখে বললেন, পিঁপড়ারা মিলেমিশে থাকে, সবাই মিলে খাবার খায়। আর তাই কেউ ওদের সঙ্গে লড়াই করতে পারে না। লুনা বলে, পিঁপড়ারা অনেক ছোট, টিপে দিলেই তো মরে যাবে। দাদু বললেন, এজন্যই পিঁপড়ারা দল বেঁধে থাকে। একতাই বল–এই উক্তিটি লুনাকে বোঝানোর জন্য দাদু পিঁপড়া ও ডায়নোসরের এক মজার গল্প বললেন। মজার গল্পটা বইটি পড়লে জানতে পারবে।



পুরো বইটিতে রঙিন ছবির সঙ্গে সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সফল হওয়ার শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। যেখানে ডায়নোসরের মতো শক্তিশালী পশুর সঙ্গে ছোট্ট পিঁপড়ার দল লড়াই করে জিতেছে, সেখানে মানুষের মতো বুদ্ধিমান-শ্রেষ্ঠ জীবের ডায়নোসরের থেকেও বড় প্রাণীদের পরাজিত করা অসম্ভব কিছু নয়। আর তার প্রামাণ্যচিত্র আমাদের স্বাধীন দেশ। এই সুন্দর উদাহরণের মাধ্যমে গল্পটিতে পরিষ্কারভাবে একতাই বল উক্তিটি বারবার প্রমাণিত হয়েছে। ঐক্যের সঙ্গে এগিয়ে গেলে সাফল্য আসবেই–সেই জ্ঞান এই গল্পটিতে ছড়ানো হয়েছে।


দাদু ছোট্ট লুনাকে প্রশ্ন করেছেন, একসঙ্গে থাকার জন্য মানুষকে কী করতে হয়? লুনা বলতে পারল না। দাদু তখন বললেন, একসঙ্গে থাকার জন্য সবাইকে ভালোবাসতে হয়। সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে খেতে হয়।


একতার শিক্ষা আমাদের মানবজাতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে ভালোবাসা নিহিত। এর গুরুত্বের পাশাপাশি একতার গুরুত্ব কতখানি, তা শিশুদের ছোট থেকেই বোঝানো উচিত।


 

অপুর দাদুগাছ

ছবি : সারা তৌফিকা


এটি চমৎকার এবং বর্ণময়চিত্রিত শিশুদের বই, যেখানে ভাগ করে নেওয়ার গুরুত্ব প্রকাশ পায়। এছাড়াও, প্রকাশ পায়, ভাগ করে নেওয়া হচ্ছে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার একটি সামাজিক দক্ষতা। গল্পটি একটি ছোট্ট ছেলে ‘অপু’কে নিয়ে, যার দাদুর একটি বড় আমগাছ আছে। দাদুর মৃত্যুর পর গাছটির সামনে তাকে কবর দেওয়া হয় বলে অপু গাছটির নাম দিয়েছিল ‘দাদুগাছ’। একদিন খুব বাতাস আসে। আম বাতাসে দুলে দুলে গাছ থেকে নিচে পড়ে যায়। অপু আম কুড়ানোর জন্য যায়; কিন্তু একা একা এত আম কুড়াতে পারে না। এমন সময় গ্রাম থেকে কিছু শিশু আম কুড়াতে আসে। যখন সব আম কুড়ানো শেষ হয় তখন তারা সব আম অপুকে দিয়ে দেয়। আর তাই, ছোট্ট অপু প্রতিটি বাচ্চাকে দুটি করে আম দেয়।



এই বইটিতে দুটি বিষয় শেখানো হয়েছে। প্রথম বিষয় হচ্ছে দলীয় কাজ। একটি প্রবাদ আছে: একা আমরা খুব কম করতে পারি; একসঙ্গে আমরা অনেক কিছু করতে পারি। এবং দ্বিতীয় বিষয় হলো, খাবার ভাগ করে নেওয়া। খাবার ভাগ করে নেওয়া বাচ্চাদের বন্ধু তৈরি করতে এবং মানবতার প্রতি সদয় হতে সাহায্য করে।


আপনার শিশুদের ভালোটা শেখানো ও খারাপটা চেনানোর সেরা উপায় হলো ইলাস্ট্রেটেড শিশুদের বই। এই বইটি শিশুদের জন্য সঠিক বাছাই।


 

খোকা সব পারে

ছবি : শ্রেয়া সেন


হঠাৎ করে শিশুর নিজেকে সবকিছুতে এক্সপার্ট মনে করার সময়টাকে ‘দ্য নো-ইট-অল ফেজ’ বলে। মূলত, শিশুরা যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বছরগুলোতে পৌঁছে যায়, তখন তাদের ছোট মন সমস্ত জ্ঞান এবং তথ্য তাদের মস্তিষ্কে নতুন করে তৈরি করে এবং তারা তাদের শেখা সব জিনিস অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার জন্যও আগ্রহী হয়ে ওঠে।


‘খোকা সব পারে’ গল্পটিতে খোকার দ্য নো-ইট-অল ফেজ চলছিল। যার ফলে, খোকা মা-কে দেখে দেখে রুটি বানাল, এরপর ভাজল। গোল না-হওয়া রুটি পুড়ে যাওয়ার পরও যখন বাবা বলল, বেশ হয়েছে; তথন খোকা ঠিক করে নিল পরদিন থেকে সব রুটি সে বানাবে এবং ভাজবে। শুধু তাই নয়, বাবার মতো সব খেতে পারে সে। ভালো না লাগলে চোখ বুজে খেয়ে নেয়। দুই মিনিটে পুরো বই পড়ে নেয়। তবে অ-আ-ক-খ নয়, শুধু ছবি দেখে। তিন চাকার সাইকেলও চালাতে পারে। খোকার সবকিছুতেই আগ্রহ আকাশছোঁয়া। বুদ্ধিও তেমনি। সমুদ্রপারে বেড়াতে গিয়ে বলল, ঢেউয়ের ওপর দিয়ে জোরে ছুটে যাবে। কিন্তু কীভাবে ছুটে যাবে তা বাবা-মা না জানলেও খোকা ঠিকই জানে। শিশুদের দ্য নো-ইট-অল ফেজ নিয়ে দারুণ একটি গল্প। এ গল্পটি পড়ে অন্য শিশুরা বেশ উৎসাহিত হবে নতুন কিছু শেখার জন্য।


 

দাদুর হাতে জাদুর লাঠি⁣

ছবি: ইশরাত জাহান শাইরা ⁣


‘দাদুর হাতে জাদুর লাঠি’–এখানে জাদুর লাঠি হলো দাদুর আদরের নাতি দীপু। বাবা-মা অফিসে চলে গেলে দাদুর জাদুর লাঠি হওয়া ছাড়া দীপুর অন্য কোনো উপায়ও নেই। দাদুর এখন আর অফিস নেই। তাই দুজন মিলে খেলাধুলায় মেতে থাকে। আর এভাবে তাদের মধ্য এক আদরমাখা ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। কিন্তু দীপু কীভাবে দাদুর জাদুর লাঠি হয়ে উঠল? আসলে দাদুর যেকোনো ভয় কিংবা বিপদে দীপু-ই জাদুর মতো দাদুকে কাঁধে নিয়ে রক্ষা করে। দাদুও দীপুকে না-দেখলে অস্থির হয়ে পড়েন। তারা একে অপরকে এতটাই ভালোবাসে।



মিষ্টি এ গল্পটির দাদু এবং নাতির মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধন রয়েছে, যা ভালোবাসা, প্রশংসা, মজা এবং খাঁটি আনন্দের ভিত্তিতে তৈরি। স্নেহের চাদরে মোড়া এই নজরকাড়া বন্ধন শিক্ষণীয় বটে। এ থেকে শিশুরা পিতামহের প্রতি আরও যত্নশীল হতে শিখবে। মূলত, এই বিশেষ বন্ধনের কারণেই পিতামহ হওয়া একজন ব্যক্তির জীবনের অন্যতম বিশেষ মুহূর্ত, যা এই গল্পে স্পষ্ট।



 

কথাসাহিত্যিক মঞ্জু সরকার ছোটগল্প, উপন্যাসও শিশুসাহিত্য রচনায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। এপর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পঞ্চাশের বেশি। সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য ১৯৯৮ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। এছাড়া ফিলিপস, আলাওল ও অগ্রণীব্যাংক-শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ আরো অনেক সম্মাননাও রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। তিনি ২০০৬ সালে আইওয়ার ইন্টারন্যাশনাল রাইটিং প্রোগ্রামে অংশনিয়েছেন। ‘তমস’, ‘মৃত্যুবাণ’ প্রভৃতি তাঁর বিখ্যাত বই। তাঁর রচিত শিশুসাহিত্যের মধ্যে অন্যতম ‘ছোট্ট এক বীরপুরুষ’, ‘রাজাকার পালায়’, ‘ভূত দেখা’, ‘অপুর দাদুগাছ’ প্রভৃতি।

78 views0 comments
bottom of page