top of page

অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ প্রাপ্ত ঝর্না রহমানের চাররঙা গল্প গ্রন্থমালা

Updated: May 30, 2021


সাহিত্যিক ঝর্না রহমানের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অতিথিরা । ছবি: প্রথম আলো


অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ পেলেন কথাসাহিত্যিক শ্রদ্ধেয় ঝর্না রহমান! তিনি একাধারে কবি, কথা ও শিশুসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক, সম্পাদক, সংগঠক, নাট্যকার, সুরকার, সংগীত ও চিত্রশিল্পী।

আমরা ভীষণ গর্বিত তাঁর এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে। ময়ূরপঙ্খি প্রকাশিত ‘চাররঙা গল্প’গ্রন্থমালা ছাড়াও তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য বই: ‘জাদুবাস্তবতার দুই সখী’, ‘নিমিখের গল্পগুলো’, ‘পিতলের চাঁদ’, ‘জল ও গোলাপের ছোবল’ প্রভৃতি।

 

চাররঙা গল্প গ্রন্থমালা

এ বইগুলোতে আছে মজার চারটি গল্প। বইটি পড়লে জানতে পারবে খেলনা কুমির কিভাবে জ্যান্ত হয়ে ওঠে, জানবে বিড়ালদের কিছু অধিকারের কথা। পরমার গল্পটি পড়ে তোমরা হয়তো আজই নিজের বাসার ঠিকানা মুখস্থ করে ফেলবে। আর সুহার গল্পটি মনে করিয়ে দেবে তোমার প্রথম দাঁত পড়ার স্মৃতি। গল্পগুলো পড়ে তোমরা বুঝতে পারবে কোনটা আছে, কোনটা নেই আর কোনটা ভালো, কোনটা মন্দ।


★৪-৮ বছর বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী।

★৭"×৮.২" ছবির বই, ১৬ পৃষ্ঠা ( প্রতিটি বই )


বই-আলোচক ও ময়ূরপঙ্খির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নিহা হাসান বইগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন।

 

দাঁতপরীর উপহার

ছবি : এস এম রাকিবুর রহমান


একটি শিশুর মুক্তোর মতো সাদা সুন্দর দাঁতের হাসি সবাইকে নিমেষে অভিভূত করতে পারে।৬ থেকে ৮ বছর বয়সে প্রতিটি শিশুর দুধের দাঁত পড়ে যায় এবং স্থায়ী দাঁতের জন্য জায়গা হয় ।যা পাশাপাশি মা-বাবাকে চিন্তায় ফেলে দেয়, যখন তাদের বাচ্চা দাঁত ফেলতে ভয় পায়।


প্রতিটি মানবসংস্কৃতিতে শিশুর দুধের দাঁত ফেলার চারদিকে কিছু রীতি অন্তর্ভুক্ত থাকে । যেমন: দাঁতটি রোদে ফেলে দিলে, কোনো বাড়ির ছাদ থেকে বা উপর থেকে ছুড়ে দিলে, পানিতে ছুড়ে দিলে, ইঁদুরের গর্তে স্থাপন করলে কিংবা দাঁতটি একটি গাছ, বাগান বা জমিতে রোপণ করলে নতুন দাঁতগুলো শিশুর মুখে সুন্দর করে বাড়বে।সবচেয়ে প্রচলিত রীতিটি হলো, পড়ে যাওয়া দুধের দাঁতটি ইঁদুরকে দিলে শিশুর নতুন স্থায়ী দাঁতগুলো ইঁদুরের দাঁতের মতো শক্ত হবে।


বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের শিশুরা ও এখনো বিশ্বাস করে, পড়ে-যাওয়া দুধের দাঁত বালিশের নিচে রাখলে, দাঁতপরি এসে দাঁতের বিনিময়ে একটি উপহার রেখে যাবেন। এমন গল্প যুগযুগ ধরে মা-বাবারা তাদের বাচ্চাদের বলে আসছেন। আসলে এটা শিশুসাহিত্যের একটি ধারণা। শিশুদের এসব গল্প বলতেই হয়। কেননা, তারা দুধের দাঁত ফেলতে ভয় পায়। সাধারণত এ ভয় কাটানোর জন্য দুধের দাঁত নিয়ে কাল্পনিক গল্প তৈরি করা হয়। যাতে বাচ্চারা হাসি-খুশি ভাবে দুধের দাঁত ফেলে দিতে আগ্রহ দেখায়।


আর তাই ৫ থেকে৮ বছরের শিশুদের জন্যময়ূরপঙ্খির আদরমাখা চিত্রিত বই ‘দাঁতপরীর উপহার’। দাঁতপরির গল্পের সুহার চব্বিশটি দাঁত। একদিন সুহা টের পেল, ওর একটা দাঁত তিরতির করে নড়ছে। সেদিন সে বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে চলে গেল মায়ের কাছে। নিজের আঙুল ছুঁয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল, ‘এই দাঁতের মধ্যে পোকা ঢুকে গেছে।’ পোকাটা বের করার জন্য মায়ের কাছে সুহার কী যে কাকুতি! মা হেসে বললেন, ‘দাঁতে পোকা নেই। এগুলো দুধের দাঁত। এই দাঁত পড়ে যাবে বলে নড়ছে। তারপর ওই গর্তগুলোয় নতুন দাঁত উঠবে, যা আর পড়বে না।’ সুহার বাবা নতুন দাঁত দেখবে বলে সুহাকে হাঁ করতে বললেন আর এক টান দিয়ে নড়বড়ে দাঁতটা তুলে নিলেন। সুহা ভয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল। সুহার ভাই সুহাকে কাঁদতে মানা করে বলল, ‘এই দাঁত তো ছোট। তাই দাঁতপরি ছোট দাঁত নিয়ে তোমাকে বড় দাঁত দেবে।’ সুহা দাঁতপরির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। তিন-চার দিন পর ঝকঝকে বরফের কুচির মতো সুহার একটি সাদা দাঁত বেরিয়ে আসে। সুহা ভেবে বলল, দাঁতপরি তাহলে এই দাঁতটাই উপহার দিয়ে গেছে!

 

নীল কুমিরের বাচ্চা

ছবি : ইশরাত জাহান শাইরা


‘নীল কুমিরের বাচ্চা’ বইটি এক্সপেনডেবল ওয়াটার টয়ের এক মজার গল্প।নিভান ও নিতিশার বড়মামা জাপান থেকে নিভানের জন্মদিনে একটি উপহার পাঠালেন।উপহারের বাকশো খুলে দেখা গেল আঙুলের সমান ছোট একটি নীল প্লাস্টিকের কুমির, ছোট ছোট নানান রঙের রাবারের গোলদানা ও একটা ছাপানো কাগজ। কাগজে লেখাছিল: ‘এটা আসলে সিলিকনের কুমির।’ সিলিকন হলো এক ধরনের রাবার, যা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে রাবারের এই ছোট্ট কুমিরটা বড় হবে।গামলায় পানি ঢেলে ছোট্ট কুমিরটা ভেজানো হলো। আর গোলদানাগুলো কাচের বাটিতে।চারদিন পর সত্যিই গোলদানাগুলো ফুটে লাল-নীল দুটো ছোট্ট ছানা বেরিয়ে এলো। ছোট্ট কুমির বড় হতে হতে গামলা ভরে গেল।দেখলে মনে হয় সত্যি সত্যি একটা কুমির। সেদিন রাতে হঠাৎ নিতিশা ঘুম থেকে উঠে চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগল, ‘কুমিরটা বিছানায় এসেছে ।আমাকে কামড় দিয়েছে...।’


জাদুরমতো বড় হওয়া কুমিরকি তাহলে সত্যিই বিছানায়এসেছিল? সিলিকনের কুমির কি চলাফেরা করতে পারে? রাবারের কুমির নিয়ে কি এক হুলুস্থুলকাণ্ড শুরু হয় নিভানের বাড়িতে। বাকি গল্পটা না-পড়া পর্যন্ত ভাবা যাক... আসলে এ খেলনা কি এমন জিনিসে তৈরি যে, বড় হয়ে সত্যিকার কুমিরের মতো বিছানায় চলে এলো...! অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার-১৪২৭ প্রাপ্ত ঝর্না রহমানের লেখা এক্সপেনডেবল ওয়াটারটয় নিয়ে এই মজার গল্প শিশুদের জন্য বেশ শিক্ষণীয়। কারণ, অনেক শিশুই এ ধরনেরখেলনা খুব আগ্রহ নিয়েপানিতে চুবিয়ে রাখে; কিন্তুখেলনাটি বড় হওয়ার পরনিজেরাই তা ছুঁতে ভয়পায়। এগল্পের মাধ্যমে জনপ্রিয় এ খেলনার সঙ্গেশিশুরা অনায়াসে পরিচিত হতে পারবে।


Take a look inside



 

পরমা হারিয়ে গিয়েছিল

ছবি : নূরুস সাফা অনিক


নিজের বাড়ির ঠিকানা, নাম, মা-বাবারনাম, ফোন নম্বর ইত্যাদি বিষয় শিশুদের শেখানো কত বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা ময়ূরপঙ্খির রঙিন চিত্রিত বই ‘পরমা হারিয়ে গিয়েছিল’-তে সরাসরি বোঝানো হয়েছে।


ছয় বছর বয়সি পরমা একদিন বাইরে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর বুঝতেপারল সে বাসায় ফেরারপথ ভুলে গেছে।চারপাশ অচেনা লাগছে। সে হারিয়ে গেছে বুঝতে পারল। ভয়পেল। মা-বাবা সবসময় বলেছেন, ‘কথনো একা বের হবে না। ছেলেধরা নিয়ে যাবে।’ পরমা কাঁদতে শুরু করে।এক যুবক তা দেখে জিজ্ঞাসা করল: ‘কী হয়েছে? কাঁদছ কেন?’ পরমা যুবকটিকে ছেলেধরা মনে করে ভয়ে ভয়ে তার মুখের দিকে তাকায়। আর চোখ মুছে বলে দিল: ‘এমনি কাঁদছি!’ যুবকটি পরমার কাছে মা-বাবার কথা জানতে চাইল। যুবকটি বুঝে ফেলল যে পরমা হারিয়ে গেছে। পরমারবাসার ঠিকানা চাইল।পরমা বলতে পারল না। শুধুবলল: ‘আমাদের বাসা একটা সাদা রঙের বিল্ডিং, লাল রঙের লোহার গেট আছে, পাশে একটা মসজিদ আছে।’ যুবকটি মসজিদ খুঁজতে শুরু করল। অবশেষে একটি মসজিদে প্রবেশ করল। যুবকটি হুজুরকে অনুরোধ করল মাইকে পরমার হারিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার জন্য। হুজুর পরমার মা-বাবার নাম জানতে চাইলে পরমা খুব সুন্দর করে তার মা-বাবার পরিচয় দেয়। শুধু তাই নয়, পরমা তারমা-বাবার পেশা সম্পর্কে ও হুজুরকে জানায়। তারপর হুজুর ঘোষণা করলেন।পরমা নিজেও মাইকে কথা বলল। কিছুক্ষণ পরেই পরমার মা-বাবা এসে পরমাকে জড়িয়ে ধরলেন। হুজুর ওই যুবকটিকে ধন্যবাদ জানালেন। সমাজে এমন যুবক ওহুজুরের মতো ভালো মানুষখুব কমই দেখা যায়। বুক কেঁপে ওঠা নানান ঘটনা আমরা খবরে প্রায়শই পড়ে থাকি।আর তাই আমাদের শিশুদের সতর্ক করার পাশাপাশি বাড়িরঠিকানা, মা-বাবার পরিচয় শেখানো অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ময়ূরপঙ্খির এই বইটি অবশ্যই আপনার শিশুকে উপহার দেবেন। শিশুকাল থেকেই তারা অনুকরণ প্রিয়। হয়তো এ বইটা পড়লে শিশুরা তাদের বাড়ির ঠিকানা মনে রাখতে বেশি আগ্রহী হবে।


 

হুলো বিড়াল আর টুলো বিড়াল

ছবি : সুমৌলি দত্ত


প্রাণীর প্রতি টুপুরের সদয় হওয়ার এক মজার শিক্ষণীয় গল্প ‘হুলো বিড়ালও টুলো বিড়াল’। টুপুরদের বাড়ির উঁচু দেওয়াল টপকে মাঝে মাঝেই বাইরেরবিড়াল আসে। নানান ধরনের বিড়াল! দুটো বিড়াল তোআর বাড়ি ছেড়ে গেলই না। বড় বিড়াল–হুলো বিড়াল। অন্যটা ছোট বিড়াল–টুলো বিড়াল।




হুলো-টুলো রান্নাঘরের মিটশেফের চারদিকে মিউ মিউ করে আর নাক দিয়ে বাতাস শুঁকতে থাকে। কাজের আপু জামিলা এদের ওপর রেগে থাকে সারাক্ষণ।একদিন টুলো খামচা খামচি করে টুপুরের জামা ছিঁড়ে ফেলল। টুপুরের মা তা দেখে হায় হায় করে উঠলেন। আর জামিলা টুলোকে মারতে চাচ্ছে দেখে টুপুরের খুব খারাপ লাগল। টুলোকে এত মারে, বকে তা-ও টুলো সবার সঙ্গে ঘেঁষে ঘেঁষে থাকে। এক দুপুরে জামিলা চিৎকার করে ওঠে। কারণ, হুলো মিটশেফে ঢুকে মাছ খেয়ে ফ্রাইপ্যানেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আজ আর পালানোর উপায় নেই। জামিলা হুলোকে বাজারের ব্যাগে ঢুকিয়ে মুখবন্ধ করে দেয়।এরপর ব্যাগের মুখ চেপে ধরে আছাড় মারে... তারপর কি হুলোকেমেরে ফেলে জামিলা, না-কি টুপুর জামিলাকে বাধ্য করে হুলো-টুলোর ওপর সদয় হতে? শিশুদের জন্য চমৎকার একগল্প, যা পড়লে শিশুরা পশু-প্রাণীদের প্রতি সদয় হতে শিখবে। প্রাণী এবং মানুষের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্ন উষ্ণসম্পর্ক তৈরি, সহানুভূতি, দয়া এবং আত্মমর্যাদাবোধ সম্পর্কে শিশুদের শেখাতে গল্প একটি আশ্চর্যজনক উপায়। প্রাণীর সঙ্গে প্রাণীর ভালো আচরণের গল্প শিশুদের দেখায়, তারা যে কারো প্রতি সদয় হতে পারে।




102 views0 comments
bottom of page